ভোট স্থগিত কিংবা বাতিল করা অথবা ভোটের পর ফলাফল বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সর্বোচ্চ ক্ষমতা। বর্তমান ইসি গাইবান্ধা–৫ আসনের উপনির্বাচনে তা প্রয়োগ করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা ইসির সাংবিধানিক কর্তব্য। এই সাংবিধানিক কর্তব্যের উপলব্ধি থেকে ইসি গাইবান্ধার ভোট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—কার কারণে গাইবান্ধায় উপনির্বাচন বন্ধ হলো। নির্বাচন পণ্ড করার পেছনে কে দায়ী? এটা খুঁজে বের করা এখন ইসির দায়িত্ব। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা ইসি যে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থেকে, নিজেদের জেগে ওঠার বাসনা থেকে নির্বাচন বাতিল করেছে, সেটা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করেছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে, এ প্রভাবিত করার অপরাধে দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের সুযোগ আছে। এখন দেখার বিষয় ইসি সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না।
গাইবান্ধার একটি আসনের উপনির্বাচনে একটা পক্ষ প্রভাবিত করেছে। সারা দেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা ‘স্যুট-টাই পরা ভদ্রবেশী’ লোকেরা যখন প্রভাবিত করবেন, তখন কি কমিশন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? ইসি একা বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে না।
তাদের সরকারের নানা সংস্থার সহায়তা নিতে হয়। গাইবান্ধায় গতকাল বুধবারের ভোটে এ দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, অর্থাৎ জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা—তাঁরা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন? এটা অবশ্যই তাঁদের ব্যর্থতা। এমন ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে না পারলে সারা দেশে একযোগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন কীভাবে তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন?
গাইবান্ধার উপনির্বাচন থেকে ইসির শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। তাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে চারটি নির্বাচন হয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। প্রতিবারই ক্ষমতাসীনদের পরাজয় হয়েছে। এসব নির্বাচনকে সবাই মোটামুটি সুষ্ঠু হিসেবে মেনে নিয়েছে। গত দুটিসহ সাতটি নির্বাচন হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। ক্ষমতাসীনদের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। পাশাপাশি এসব নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে।
এ পরিস্থিতিতে ইসিকে ভাবতে হবে—তারা কি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠুভাবে করতে পারবে? যদি না পারে, তাহলে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিবর্তনের পরামর্শ চাইতে পারে।
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো | ১৩ অক্টোবর, ২০২২