দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রকাশের সময় একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘ইসি আস্থার ঘাটতিতে আছে। ’ কিন্তু যে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হলো, তাতে আস্থার সংকট কি কমবে? আমার মনে হয় সংকট বাড়বে।

কর্মপরিকল্পনায় ইভিএম ব্যবহারকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিজ্ঞাপন

ইভিএমের ওপর সম্প্রতি একটি জরিপ হয়েছে। এতে ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে ১৬ হাজার মানুষের হ্যাঁ-না ভোট নেওয়া হয়। তাতে অংশগ্রহণকারীদের ৯৭ শতাংশই ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও নির্বাচন কমিশন মনে করে, ইভিএম বেশি গ্রহণযোগ্য। এর পক্ষে নানা যুক্তিও দেখিয়ে চলেছে তারা।

আমরা বলেছি, যেহেতু ইভিএম ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, এর সফটওয়্যারের সোর্স কোড অন্য কারো কাছে নেই এবং এটি সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে, তাই এটি দিয়ে বাইরের কারো পক্ষে কারচুপি করা প্রায় অসম্ভব। যদিও কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষে কমিশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কমিশনের ইন্ট্রানেটে ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্য কম্পিউটার থেকে ইভিএমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব।

আমরা আরো বলেছি, বর্তমান ইভিএম কারিগরি দিক থেকে দুর্বল একটি যন্ত্র। আর এই ত্রুটি কাজে লাগিয়ে কমিশনের অধস্তন কোনো কর্মকর্তা, কারিগরি টিম এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের পক্ষে নির্বাচনে কারসাজি করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন যদি আস্থার সংকট কমিয়ে আনতে চায়, তাহলে এ বিষয়ে তাদের একটি রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা করা দরকার। কিভাবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট কমবে তার উপায় অনুসন্ধান নির্বাচন কমিশনকেই করতে হবে।

গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। একই ব্যবস্থায় নির্বাচনের জন্য যে রোডম্যাপ বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, তাতে মনে হচ্ছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, এমন একটি বিষয়কে চুনকাম করে গ্রহণযোগ্য বানানোর চেষ্টা চলছে।

বিরোধী দলের ওপর এখনো হামলা হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো ইচ্ছাও তারা দেখাচ্ছে না। এ অবস্থায় তাদের বাইরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ পণ্ডশ্রম হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন তাদের রোডম্যাপে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে সংজ্ঞায়িত করেছে ‘ইচ্ছুক সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ’ হিসেবে। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে শুধু ইচ্ছুক দলের অংশগ্রহণে তো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। নির্বাচন হতে হবে প্রতিযোগিতামূলক। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে কমিশন যেভাবে দেখতে চাচ্ছে তাতে মনে হতে পারে, যেসব দল বর্তমান পরিস্থিতি ও ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে অনাগ্রহী, তাদের এখনই বাদ দিতে চাচ্ছে কমিশন। এটা হলে কমিশন অংশীজনদের কাছে আরো আস্থাহীন হয়ে পড়বে।

তথ্য সূত্র: কালের কন্ঠ | ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২