দেশের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, এটা দেশবাসীর প্রত্যাশা হলেও বাস্তবে বিভিন্ন নির্বাচনে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বস্তুত নির্বাচনকে ঘিরে এসব সহিংসতা রোগের উপসর্গ মাত্র, এটি আসল রোগ নয়। আমাদের রোগের উপসর্গ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার না করে আসল রোগটি নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে এবং এর সমাধানে সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমার মনে হয়, এই সহিংসতার একটি প্রধান কারণ সুবিধাবাদের রাজনীতি। জনকল্যাণের জন্য কাজ করেন, দেশে এখন এমন রাজনীতিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখন যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের প্রায় সবাই ব্যস্ত ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ রক্ষায়।

অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন কিছু পাওয়ার জন্য। অথচ আমরা জানি, রাজনীতি একটি মহান পেশা; এই পেশায় নিয়োজিতদের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করা। গণতন্ত্র চর্চার শত শত বছরের অভিজ্ঞতা ও পণ্ডিতদের প্রজ্ঞা কাজে লাগানো সম্ভব না হলে সহিংসতার বৃত্ত থেকে বের হওয়া কঠিন।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকেন তারা এবং তাদের অনুসারীরা যাতে কোনোরকম অন্যায় করে পার পেতে না পারে এবং সুবিধাবাদের রাজনৈতিক চর্চা করতে না পারে তার জন্য দেশে সাংবিধানিক, বিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্রবহির্ভূত (সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক দল) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে সুবিধাবাদের রাজনীতির অবসান ঘটাতে না পারলে উল্লেখিত রোগ দূরীভূত হবে না, রোগ নিরাময় হবে না এবং সহিংসতা দূর হবে না।

অনেকেই মনে করেন, ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ পেলে সহজে নির্বাচিত হওয়া যাবে। এজন্য তারা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং তখনো সহিংসতার সৃষ্টি হয়।

এক সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো নির্দলীয়ভিত্তিতে হতো। ওই ধারায় ফিরে গেলে আশা করা যায়, এসব নির্বাচনে সহিংসতা কমবে। যে কোনো অপকর্মের প্রতিকারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি কঠোর হতো তাহলে সহিংসতা কমতো। কিন্তু ইসিকে তেমন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না।

এসব সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও সুবিধাবাদের রাজনীতি দূর করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এসব রোগ সারাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ নিয়ে আমরা যতই আলোচনা করি না কেন, সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। কাজেই সাময়িক সমাধানের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে এ বিষয়ক মূল সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলেই দেশের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং দেশবাসীর প্রত্যাশাও পূর্ণ হবে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন

তথ্য সূত্র: যুগান্তর | নভেম্বর ২০২১